হিস্টামিন (Histamine) হলো এক ধরনের প্রাণীজ অ্যামিন যার রাসায়নিক নাম বিটা ইমিডাজ্যিল এসিটাইলকোলিন (Beta-imidazoyl acetylcholine) বা বিটা ইমিডাজ্যিল ইথাইল অ্যামিন (Beta-imidazoyl ethyl amine)।
ল্যাটিন হিস্টোস (Histos) শব্দটির অর্থ প্রাণী কলা বা শরীরের টিস্যু এবং আয়ামিন (Amine) শব্দটি বোঝায় প্রাণীজ অ্যমিন যা তৈরী হয় প্রাণী কলায়।
মূলত হিস্টামিন সকল স্তন্যপায়ী কলায় উপস্থিত থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়, শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রনে এবং নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে থাকে। এটা কার্যত প্রাণীর শরীরের সকল কোষে পাওয়া যায়।
হিস্টামিনের এক ধরনের সমাণু (H1) চুলকানি ও অন্যান্য এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী, আর এক ধরনের সমানু (H2) পাকস্থলীর পাচক অ্যাসিড নিঃসরন নিয়ন্ত্রণ করে।
আপাতদৃষ্টিতে হিস্টামিন শরীরের রসায়নে একটি সুরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এটির স্বাভাবিক ক্রিয়া বা ধর্ম কি, তা এখনও সম্পূর্ণ জ্ঞাত নয়। হিস্টামিন দেহে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, যেমন রক্তবাহী নালির প্রশস্ত হওয়া, ফুসফুসের মসৃণ পেশীসমূহের সংকোচন এবং পাকস্থলীর রস নিঃসরণ উদ্দীপ্তকরণ, ইত্যাদি।
হিস্টামিনের কাজ কি? হিস্টামিন সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহকলায় উপস্থিত থাকে। কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে থেকে নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়, শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
হিস্টামিন বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন মানুষ শারীরিকভাবে বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পতিত হয়। যেমন- ত্বকে ফুসকুড়ি উঠা, ত্বকে চুলকানী, সর্দি বা হাঁচি সৃষ্টি ইত্যাদি। এই সকল অসুবিধা দূর করার জন্য ব্যবহৃত ড্রাগগুলোকে হিস্টামিন-প্রতিরোধক (anti-histamine) বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য হিস্টামিন-প্রতিরোধকগুলো শরীরের হিস্টামিন নিঃসরণ বন্ধ করতে পারে না। কিন্তু এর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।ফলে হিস্টামিন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িক স্বস্তি লাভ করে। এই জাতীয় রোগের জন্য ক্লোরফেনিরামিন মেলিয়েট-কে বিশেষ কার্যকরী ড্রাগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
হিস্টামিনঔষধ ঔষধ হিসেবে হিস্টামিনের ব্যবহার খুবই সীমিত, কিন্তু যেহেতু এটি চুল্কানি ও অন্যান্য এলার্জিক প্রতিক্রিয়া এবং পাকস্থলীর পাচক অ্যাসিড নিঃসব্রণে ভুমিকে পালন করে সেহেতু যে সমস্ত ঔষধ হিস্টামিন প্রতিরোধী তাদের ব্যবহার করে চুল্কানি ও অন্যান্য এলার্জিক প্রতিক্রিয়া এবং পাকস্থলীর পাচক অ্যাসিড নিঃসব্রণ নিয়ন্রন করা যায়। এ কারনে যে সমস্ত ঔষধ হিস্টামিন প্রতিরোধী তারা ঔষধ বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ।